নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় ভুয়া প্রতিবন্ধী কাগজ তৈরি করে মৃত শিক্ষক পিতার পেনশন ভাতা চালু করে আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সরেজমিনে তদন্তে আসায় বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাৎকারী ওই ব্যক্তি বর্তমানে লোকলজ্জার ভয়ে গাঁ ঢাকা দিয়েছেন। জানা গেছে, উপজেলার ৯নং সাপলেজা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড চড়কগাছিয়া গ্রামের মৃত. লেহাজ উদ্দিন মাষ্টারের পুত্র শহীদ হাওলাদার পেনশনভোগী পিতার মৃত্যুঅন্তে পরবর্তী ভোগকারী মায়ের মৃত্যুর পর উক্ত পেনশন ভাতা অন্যায়ভাবে ভোগ করার জন্য নিজের অনুকূলে প্রতিবন্ধী কাগজপত্র তৈরি করেন। উক্ত কাগজপত্র তৈরি করে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন। সরকারি চাকুরিজীবির কোন সন্তান প্রতিবন্ধী থাকলে ওই সন্তান পেনশন ভাতা উত্তোলন ও ভোগ করতে পারবেন জেনে উক্ত শহিদ প্রতারণার আশ্রয় নেয়। সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা গেছে,অবসরপ্রাপ্ত পিতার পেনশন ভাতা ভোগ করতে চাওয়া সন্তান অর্থাৎ আবেদনকারী প্রতিবন্ধী কিনা এজন্য ডাক্তারি সনদ প্রয়োজন হয়। এরপর অনলাইনে এন্ট্রি দেওয়ার পর একটি পরিচয় পত্রের প্রিন্ট কপি বের করতে হয়।উক্ত পরিচয় পত্র অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সমাজসেবা কর্মী ওই আবেদনকারীর নাম রেজিস্টার বইতে এন্ট্রি করেন। এন্ট্রি করার পর সমাজকর্মী ওই পরিচয় পত্রটি উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে নিয়ে আসলে ডাক্তারী সনদ দেখে তিনি পরিচয় পত্রটিতে স্বাক্ষর করার নিয়ম।কিন্তু এ বিষয়টি কিভাবে হয়েছে আমাদের জানা নেই।
এ ব্যাপারে সাপলেজা ইউনিয়ন সমাজকর্মী মো. শাহ আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। এছাড়া তিনি জানান,এ বিষয়টি সমাজসেবা অফিসের কোনো কাজ নয়। অন্যদিকে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বিষয়টি সমাজসেবা অফিসের বলে নিশ্চিত করেছেন। উপজেলা সমাজসেবা অফিসার আতাউর রহমান জানান,প্রতিবন্ধী সঠিক কিনা ডাক্তারী সনদের ওপর অনেকটা নির্ভর করে। ডাক্তারী সনদটি যাচাই করে দেখা হবে। এদিকে অনুসন্ধানে জানা যায়,এ অনিয়ম ও দুর্নীতিতে উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের জুনিয়র অডিট অফিসার মজিবর রহমানের যোগসাজস রয়েছে। উক্ত শহিদ হাওলদারকে তিনিই নাকি জাল-জালিয়াতির পথ দেখিয়েছেন বলে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের মজিবর রহমান জানান, আমি কাউকে নিয়ম কানুনের বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারি। তাই বলে যে আমার যোগসাজশ আছে সেটা কিভাবে বুঝবেন? স্থানীয় ইউপি সদস্য কাঞ্চন পঞ্চায়েত জানান, মৃত লেহাজ উদ্দিন মাস্টারের পুত্র শহীদ প্রতিবন্ধী নয়। এরকমের ভুয়া প্রতিবন্ধী তৈরি হলে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় হবে। এর সাথে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মৃত লেহাজ উদ্দিন মাষ্টারের পুত্র শহিদ প্রতিবন্ধী নয় বলে স্হানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মিরাজ মিয়া সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন। এ ব্যাপারে পিরোজপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু আলী মো.সাজ্জাদ হোসেন জানান, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে সরকারি টাকা আত্মসাৎকারীকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে আত্মসাৎকৃত টাকা ফেরত দিতে হবে। এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
Leave a Reply